pattabukaassohumrd
Jun 15, 2017
Jatindramohan Bagchi
Jatindramohan Bagchi (27 November 1878 in Nadia, West Bengal - 1 February 1948) was a Bengali poet and editor.
Early life
He was born in Jamsherpur,(karimpur block-i) in Nadia, in rural Bengal. He took his first degree from the Duff College (now Scottish Church College) in Calcutta.
Professional career
He worked in varying capacities as secretary to Justice Saradacharan Mitra, and to the Maharaja of Natore. Later he would work as License Collector of the Kolkata Municipal Corporation, and as manager of FN Gupta Company.
Literary career
He was a prolific contributor to a number of literary journals. Between 1909 and 1913, he also edited the cultural journal Manasi. In 1921 and in 1922, he served as a joint editor of another cultural journal Jamuna. He would later become the owner and editor of the journal Purvachal between 1947 and 1948. His poetry showed the influence of his intellectual contemporary Rabindranath Tagore. He is considered a major voice of the post-Rabindranath period in Bengali poetry.[1] His poetry conveyed the intricacies of life in rural Bengal, in all its joys and sorrows. He died on 1 February 1948.
Poems
• Kajladidi (Sreekol)
• Andha Badhu
Collected poems
• Lekha (1906),
• Rekha (1910),
• Aparajita (1915),
• Bandhur Dan (1918),
• Jagarani (1922),
• Niharika (1927)
• Mahabharati (1936)
Criticism[edit]
• Rabindranath O Yugasahitya
Jatindramohan Bagchi Biography
Jatindramohan Bagchi was a poet and journalist from Bengal. He has published many poetry collections and one literary criticism work titled Rabindranath O Yugasahitya. Lekha (1906), Rekha (1910), Aparajita (1915), Bandhur Dan (1918), Jagarani (1922), Niharika (1927) and Mahabharati (1936) are his published anthologies of poems. Rabindranath Tagore was his contemporary poet and many of his works showed influences of Tagore. He is one of the major Bengali poets post Tagore period. He expressed Bengal rural life, their sorrows, happiness and emotions through his works. He has been associated with the cultural
journals – Manasi, Purvachal and Jamuna as an editor. Jatindramohan Bagchi was born on 27 November 1878 in Nadia, West Bengal. He was the son of Harimohan, a resident of Balagar, Hughli. He passed the Entrance exam in 1896 and FA in 1898. He studied at Scottish Church College, Kolkata then known by the name Duff College. He completed Bachelor of Arts in 1902. Later he did many jobs like secretary to Justice Saradacharan Mitra, License Collector of the Kolkata Municipal Corporation, and manager of FN Gupta Company etc. Yet he gained public attention as a poet and was a prolific editor too. He contributed to a number of literary journals as well. Kajladidi, Dasiputro, Shopno Desh, Diprohore, Hafizer Proshno, Aporajita, Ondho Badhu, Kalonko, Joubon Chanchollyo, Sadhona, NagKeshor, Keya Ful, Kormo, Madhobika and Andha Badhu are his popular poems. He portrayed the natural beauty of Bangladesh through his poems. He became the owner of Purvachal during Indian independence period and passed away in 1948.
Poet Home at Jamsherpur village
কাজলা দিদি
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে'
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
কলঙ্ক
বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর---
কলঙ্কী মন, চেয়ে দেখ্ আজি সঙ্গী মিলেছে তোর |
. দিবা অবসান, রবি হ'ল রাঙা,
. পশ্চিমাকাশে নট্ কনা -ভাঙা ;
সঙ্গহীনের যাহা কিছু কাজ সাঙ্গ করেছি মোর,
কুঞ্জদুয়ারে ব'সে আছি একা কুসুমগন্ধে ভোর !
আধফুটন্ত বাতাবিকুসুমে কানন ভরিয়া আছে,--
কি গোপন কথা গুঞ্জরি' অলি ফিরিছে ফুলের কাছে !
. ফুটনোন্মুখ ফুলদলগুলি
. পুলক-পরশে উঠে দুলিদুলি
গন্ধভিখারী সন্ধ্যার বায় ফুলপরিমল যাচে---
সঙ্কোচে নত পুষ্পবালিকা--অতিথি ফিরে বা পাছে !
বেলা বয়ে যায়, সন্ধ্যার বায় আসি' কহে বার বার,
সন্ধ্যা হয় যে অন্ধ কুসুম---খোলো অন্তর-দ্বার !
. মুকুলগন্ধ অন্ধ ব্যথায়
. কুঁড়ির বন্ধ টুটিবারে চায়,
লুটাইতে চায় সন্ধ্যার পায় রুদ্ধ আবেগভার,
বিকাইতে চায় চরণের পরে কৌমার সুকুমার |
মন্থরপদে সন্ধ্যা নামিছে কাজলতিমিরে আঁকা,
দুয়ারে অতিথি, অন্তরে ব্যথা-- সম্ভব সে কি থাকা ?
. গন্ধে পাগল অন্তর যার,
. আবরণ মাঝে থাকে সে কি আর,
খুলি' দিল দ্বার, পরান তাহার পরাগে-শিশিরে মাখা ;
কুঞ্জ ঘিরিয়া আঁধারে ছাইল স্বপ্নপাখীর পাখা |
বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর--
হা রে কলঙ্কী হৃদয় আমার, সঙ্গী মিলেছে তোর |
. দূরদিগন্তে দিবা হল সারা ;
. অন্তর ভরি ফুটে' উঠে তারা,
নব-ফুটন্ত নেবুর গন্ধে আসিল তন্দ্রাঘোর---
কলঙ্কী প্রেম, মুগ্ধ হৃদয়---একই পরিণাম তোর ||
কেয়াফুল
ফুল চাই --- চাই কেয়াফুল !---
. সহসা পথের ‘পরে
. আমার এ ভাঙ্গা ঘরে
. কন্ঠ কার ধ্বনিল আকুল |
. তখনো শ্রাবণ-সন্ধ্যা
. নিঃশেষে হয়নি বন্ধ্যা---
. থেকে থেকে ঝরিতেছে জল ;
. পবন উঠিছে জেগে,
. বিজলী ঝলিছে বেগে---
. মেঘে মেঘে বাজিছে মাদল |
জনহীন ক্ষুব্ধ পথ
. জাগিছে দুঃস্বপ্নবৎ--
. বুকে চাপি' আর্ত্ত অন্ধকার ;
কোনমতে কাজ সারি'
. যে যার ফিরিছে বাড়ী,
. ঘরে ঘরে বন্ধ যত দ্বার|
. শূন্য ঘরে
. হিয়া গুমরিয়া মরে
. স্মরি' যত জীবনের ভুল ;
অকস্মাৎ তারি মাঝে
. ধ্বনি কার কানে বাজে---
. চাই ফুল--চাই কেয়াফুল !
. পাগল ! আজি এ রাতে
. এ দুর্য্যোগ-অভিঘাতে--
. বৃষ্টিপাতে বিলুপ্ত মেদিনী ;
. তার মাঝে কে আছে,
. কেতকী-সৌরভ যাচে !
. কোথায় বা হবে বিকিকিনি ?
পবন উঠিছে মাতি !
. কিছুক্ষণ কান পাতি'
. মনে হ'ল গিয়াছে বালাই ;
সহসা আমারি দ্বারে
. ডাক এল একেবারে--
. চাই ফুল -- কেয়াফুল চাই !
. ভাবিলাম মনে মনে---
. হয়ত বা এ জীবনে
. কোনোদিন কিনেছিনু ফুল ;
. সেই কথা মনে ক'রে
. আজো বা আশায় ঘোরে ;
. কিম্বা কারে করিয়াছে ভুল !
তাড়াতাড়ি আলো তুলি'
. বাহিরিনু দ্বার খুলি,
. সবিস্ময়ে দেখিলাম চেয়ে--
মাথায় বৃহৎ ডালা,
. দাঁড়ায়ে পসারী-বালা---
. শ্রাবণ ঝরিছে অঙ্গ বেয়ে ;
. কহিলাম, এ কি কান্ড !
. তোমার পসরাভান্ড
. আজ রাতে কে কিনিবে আর ?
. এ প্রলয়ে কারো কাছে
. কিছু কি প্রত্যাশা আছে---
. কেন মিছে বহিছ এ ভার !
আর্দ্র দেহে আর্দ্র বাসে
. সে কহিল মৃদু হাসে,---
. শিরে বায়ু সুগন্ধ ছড়ায়--
যে ফুল বেসাতি করি,
. বাদল যে শিরে ধরি,---
. কপালে লিখিল বিধি তাই !
. বহিয়া দুখের ঋণ
. যে কষ্টে কাটাই দিন---
. এ দুর্দ্দিন কিবা তার কাছে ?
. --- ওগো তুমি নেবে কিছু ?
. নয়ন হইল নীচু--
. সেথাও বা মেঘ নামিয়াছে !
খোলা দরজার পাশে
. বায়ু গরজিয়া আসে,
. ফুলবাসে ভরি দেহ-মন ;
ঝর-ঝর ঝরে জল,
. আঁখি করে ছল-ছল
. ঘনাইয়া প্রাণের শ্রাবণ !
. বাদলের বিহ্বলতা--
. বুঝি হায় ! লাগিল তা'
. নয়নে বচনে সর্ব্ব দেহে ;
. সহসা চাহিয়া আড়
. রমণী ফিরাল ঘাড়---
. উর্দ্ধে যেন কি দেখিবে চেয়ে !
না কহিয়া কোন বাণী
. পসরা লইনু টানি'---
. মূল্য তার হাতে দিনু যবে,
উজার করিতে ডালা
. কাঁদিয়া ফেলিল বালা---
. ওমা এ কি -- এত কেন হবে ?
. কহিনু --যা' কিনিলাম,
. এ নহে তাহারি দাম---
. প্রতিদিন দিতে হবে মোরে ;
. এক পণ দুই পণ--
. যেদিন যেমন মন,
. তাহারি আগাম দিনু তোরে ;
কতক বুঝে' না-বুঝে'
. হৃদয়ের ভাষা খুঁজে'
. বহুকষ্টে জানাইয়া তাই,
পুষ্পগন্ধে মোরে ঘিরে'
. অন্ধকারে ধীরে-ধীরে
. পসারিনী লইল বিদায় |
. ফিরিনু একলা ঘরে---
. বাদল তখনো ঝরে,
. পুষ্পগন্ধে পূর্ণ গৃহতল ;
. শয্যা লইলাম পাতি'
. নিবায়ে দিলাম বাতি--
. আবার আসিল বেগে জল !
রুদ্ধ জানালার ফাঁকে
. বাতাস কাহারে ডাকে,
. বিজলী চমকি' কারে চায় !
কোন্ অন্ধ অনুরাগে
. ত্রিযামা যামিনী জাগে
. শ্রাবণ ব্যাকুল-ব্যর্থতায় !
. সঙ্গীহীন শূন্য ঘরে
. হিয়া গুমরিয়া মরে--
. স্মরিয়া এ জীবনের ভুল ;
. সেই সাথে থেকে- থেকে
. মনে হয় -- গেল ডেকে'
. কাননের যত কেয়াফুল
কর্ম
শক্তি মায়ের ভৃত্য মোরা- নিত্য খাটি নিত্য খাই,
শক্ত বাহু, শক্ত চরণ, চিত্তে সাহস সর্বদাই |
ক্ষুদ্র হউক, তুচ্ছ হউক, সর্ব সরম-শঙ্কাহীন--
কর্ম মোদের ধর্ম বলি কর্ম করি রাত্রি দিন |
চৌদ্দ পুরুষ নিঃস্ব মোদের - বিন্দু তাহে লজ্জা নাই,
কর্ম মোদের রক্ষা করে অর্ঘ্য সঁপি কর্মে তাই |
সাধ্য যেমন - শক্তি যেমন - তেমনি অটল চেষ্টাতে-
দুঃখে-সুখে হাস্যমুখে কর্ম করি নিষ্ঠাতে |
কর্মে ক্ষুধার অন্ন যোগায়, কর্মে দেহে স্বাস্থ্য পাই ;
দুর্ভাবনায় শান্তি আনে -- নির্ভাবনায় নিদ্রা যাই |
তুচ্ছ পরচর্চাগ্লানি-- মন্দ ভালো-- কোন্ টা কে--
নিন্দা হতে মুক্তি দিয়া হাল্কা রেখে মনটাকে |
পৃথ্বি-মাতার পুত্র মোরা, মৃত্তিকা তার শয্যা তাই ;
পুষ্পে-তৃণে বাসটি ছাওয়া, দীপ্তি-হাওয়া ভগ্নী-ভাই |
তৃপ্তি তাঁরি শস্যে-জলে ক্ষুত্ পিপাসা দুঃসহ |
মুক্ত মাঠে যুক্ত করে বন্দি তাঁরেই প্রত্যহ |
ক্ষুদ্র নহি - তুচ্ছ নহি - ব্যর্থ মোরা নই কভু |
অর্থ মোদের দাস্য করে - অর্থ মোদের নয় প্রভু |
স্বর্ণ বল, রৌপ্য বল, বিত্তে করি জন্মদান,
চিত্ত তবু রিক্ত মোদের নিত্য রহে শক্তিমান |
কীর্তি মোদের মৃত্তিকাতে প্রত্যহ রয় মুদ্রিত,
শুণ্য' পরে নিত্য হের স্তোত্র মোদের উদ্গীত |
সিন্ধুবারি পণ্য বহি' ধন্য করে তৃপ্তিতে,
বহ্নি' মোদের রুদ্র প্রতাপ ব্যক্ত করে দীপ্তিতে |
বিশ্ব জুড়ি' সৃষ্টি মোদের, হস্ত মোদের বিশ্বময়,
কাণ্ড মোদের, সর্বঘটে - কোন্ খানে তা দৃষ্য নয়?
বিশ্বনাথের যজ্ঞশালে কর্মযোগের অন্ত নাই,
কর্ম সে যে ধর্ম মোদের, - কর্ম চাহি - কর্ম চাই |
মাধবিকা
দখিন হাওয়া--রঙিন হাওয়া, নূতন রঙের ভাণ্ডারী,
জীবন-রসের রসিক বঁধু, যৌবনেরি কাণ্ডারী!
সিন্ধু থেকে সদ্দ বুঝি আসছ আজি স্নান করি'--
গাং-চিলেদের পক্ষধ্বনির শন্ শনানির গান্ ধরি' ;
মৌমাছিদের মনভুলানি গুনগুনানির সুর ধরে'--
চললে কোথায় মুগ্ধ পথিক, পথটি বেয়ে উত্তরে?
অনেক দিনের পরে দেখা, বছর-পারের সঙ্গী গো,
হোক্ না হাজার ছাড়াছাড়ি, রেখেছ সেই ভঙ্গি তো!
--তেমনি সরস ঠাণ্ডা পরশ, তেমনি গলার হাঁকটি , সেই
দেখতে পেলেই চিনতে পারি, কোনোখানেই ফাঁকটি নেই!
--কোথায় ছিলে বন্ধু আমার, কোন্ মলয়ের বন ঘিরে,'
নারিকেলের কুঞ্জে-বেড়া কোন্ সাগরের কোন্ তীরে!
লকলকে সেই বেতসবীথির বলো তো ভাই কোন্ গলি,
এলা-লতার কেয়াপাতার খবর তো সব মঙ্গলই?
--ভালো কথা, দেখলে পথে সবাই তোমায় বন্দে তো,--
বন্ধু বলে' চিনতে কারো হয়নি তো ভাই সন্দেহ?
নরনারী তোমার মোহে তেমনি তো সব ভুল করে--
তেমনিতর পরস্পরের মনের বনে ফুল ধরে!
আসতে যেতে দীঘির পথে তেমনি নারীর ছল করা ;
পথিকবধুর চোখের কোণে তেমনি তো সেই জলভরা?
* * * *
রঙ্গনে সেই রং তো আছে, অশোকে তাই ফুটছে তো,
শাখায় তারি দুলতে দোলায় তরুণীদল জুটছে তো?
তোমায় দেখে' তেমনি দেখে উঠছে তো সব বিহঙ্গ,
সবুজ ঘাসের শীষটি বেয়ে রয় তো চেয়ে পতঙ্গ?
তেমনি--সবই তেমনি আছে! -- হ'লাম শুনে' খুব খুশী,
প্রাণটা ওঠে চনচনিয়ে, মনটা ওঠে উসখুসি', --
নূতন রসে রসল হৃদয়, রক্ত চলে চঞ্চলি', --
বন্ধু তোমায় অর্ঘ্য দিলাম উচ্ছলিত অঞ্জলি |
গ্রহণ করো, গ্রহণ করো--বন্ধু আমার দণ্ডেকের--
জানিনাক আবার কবে দেখা তোমার সঙ্গে ফের ||
নাগকেশর
চিত্ততলে যে নাগবালা ছড়িয়ে ছিঁড়ে কেশের কেশর কাঁদছে---
অফুরন্ত অশ্রুধারা সহস্রবার নাসার বেশর বাঁধছে ;
মানিক-হারা পাগল-পারা যে বেদনা বাজছে তাহার বক্ষে,
পলে-পলে পলক বেয়ে অলক ছেয়ে ঝরছে যাহা চক্ষে ;
দুঃখে-ভাঙা বক্ষে যাহা নিশ্বসিয়া সকাল-সাঁঝে টুটছে--
মহাকালের সোপানতলে নাগকেশরের ফুল হয়ে তাই ফুটছে !
মন-পাতালে যে নাগবালা রতন-জ্বালা কক্ষে ব'সে হাসছে--
দীপ্তি যাহার নেত্রপথে শুভ্র-শুচি দৃষ্টি হয়ে আসছে ;
মুক্তামানিক সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে উল্লাসে যে চঞ্চল,
উদ্বেলিত সিন্ধুসম দুলছে যাহার উচ্ছৃসিত অঞ্চল ;
বিশ্বভুবন পূর্ণ ক'রে যে আনন্দ শঙ্খস্বরে উঠছে---
মহাকালের সোপানতলে নাগকেশরের ফুল হয়ে তাই ফুটছে |
অন্ধ বধূ
পায়ের তলায় নরম ঠেকল কি!
আস্তে একটু চল না ঠাকুর-ঝি--
. ওমা, এযে ঝরা-বকুল! নয়?
তাইত বলি, বসে' দোরের পাশে,
রাত্তিরে কাল--মধুমদির বাসে
. আকাশ-পাতাল কতই মনে হয় |
জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরী ভাই--
আমের গায়ে বরণ দেখা যায়?
--অনেক দেরী? কেমন করে' হবে!
কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে,
. দখিণ হাওয়া--বন্দ কবে ভাই ;
দীঘির ঘটে নতুন সিঁড়ি জাগে--
শেওলা-পিছল--এমনি শঙ্কা লাগে,
. পা-পিছলিয়ে তলিয়ে যদি যাই!
মন্দ নেহাৎ হয় না কিন্তু তায়--
অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে' যায়!
দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্,
অন্ধ গেলে কি আর হবে বোন?
. বাঁচবি তোরা--দাদা ত তোর আগে ;
এই আষাঢ়েই আবার বিয়ে হবে,
বাড়ী আসার পথ খুঁজে' না পাবে--
. দেখবি তখন প্রবাস কেমন লাগে?
--কি বল্লি ভাই, কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল?
হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল!
কত লোকেই যায় ত পরবাসে--
কাল-বোশেখে কে না বাড়ী আসে?
. চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ!
পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর,
তোমার ভাইয়ের সবই স্বতন্তর--
. ফিরে' আসার নাই কোন উদ্দেশ!
--ঐ য়ে হেথায় ঘরের কাঁটা আছে--
ফিরে' আসতে হবে ত তার কাছে!
এইখানেতে একটু ধরিস ভাই,
পিছল ভারি -- ফস্ কে যদি যাই--
. এ অক্ষমার রক্ষা কি আর আছে!
আসুন ফিরে'--অনেক দিনের আশা,
থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা--
. তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে!
জন্মশোধের বিদায় নিয়ে ফিরে'--
সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে |
'চোখ গেল' ঐ চেঁচিয়ে হ'ল সারা!
আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা--
. জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ!
কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার--ছাই!
কাঁদতে পেলে বাঁচত সে যে ভাই,
. কতক তবু কমত যে তার শোক!
'চোখ গেল' --তার ভরসা তবু আছে--
চক্ষুহীনার কি কথা কার কাছে!
টানিস কেন? কিসের তাড়াতাডি--
সেই ত ফিরে' যাব আবার বাড়ী,
. একলা থাকা সেই ত গৃহকোণ--
তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে
দুটো যেন প্রাণের কথা বলে--
. দরদ-ভরা দুখের আলাপন ;
পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মত
ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত!
এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে
অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে--
. বন্দ চোখের অশ্রু রুধি' পাতায়,
জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে
চিরবিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে--
. সকল বালাই বহি আপন মাথায়!
দেখিস তখন, কাণার জন্য আর
কষ্ট কিছু হয়না যেন তাঁর |
তার পরে--এই শেওলা-দীঘির ধার--
সঙ্গে আসতে বলবো নাক আর,
. শেষের পথে কিসের বল' ভয়--
এইখানে এই বেতের বনের ধারে,
ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে--
. সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়!
শেওলা-দীঘির শীতল অতল নীরে--
মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে!
সাধনা
নিন্দা হবে জানি--
তবু রাণী, তোমার দ্বারেই সাধবো সেতার খানি |
আঙুল আমার বশ মানেনা, সুর ফোটে না তারে,
অধীর আবেগ আঘাত শুধু করে বুকের দ্বারে ;
তুমি তারে গুছিয়ে বেঁধে বশ মানিয়ে নিয়ে
সফল করে' তোলো তোমার ভাবের আবেশ দিয়ে !
মর্ম্মরিয়া বাজুক সে তার মর্ম্মতারের মত
গুঞ্জরিয়া উঠুক বুকের গোপন ব্যথা যত ;
করুক লোকে কানাকানি, হাসুক যেবা হাসে-
তোমার চোখের দীপ্তিতে আজ দীক্ষা দেহ দাসে |
. শঙ্কা তোমার নাই-
নিভৃত যে কুটীর খানি গ্রামের সীমানায় ;
উদার মাঠে নদী পারের পথটি গেছে বাঁকা,
শিয়রে তার নিঃশ্বসিছে বুনো-ঝাউয়ের শাখা |
এদিক বড় লোক চলেনা, ভাবে - যে জন যায়-
এমন সাঁঝে মাঠের মাঝে গজল কে বাজায় !
পথিক জানবে কেমন ক'রে কে লাগায় সে সুর ;
কাহার দেওয়া ব্যথায় হেথা সেতার ভরপুর !
না-হয় হেথায় নাইক প্রাসাদ, যন্ত্রী নাই বা আছে,
একটি ভক্ত জাগে তবু একটি দেবীর কাছে !
. বিজন নদী তীর--
ঝাউ শাখাতে ঘনায় ধীরে নিশীথ সুনিবিড় ;
দুয়ার না হয় খোলাই থাকুক, কিসের ক্ষতি তায় !
ভয় কোর' না - ভৃত্য দ্বারে রইল প্রতীক্ষায় !
দখিন বায়ে গৃহচ্ছায়ে কাঁপছে যে দীপ খানি,
সেই কাঁপনের সুরটি ধরে' গমক যাবো টানি !
থরথরিয়ে কাঁপবে আঙুল , বক্ষ কাঁপবে সাথে,
অশ্রু কাঁপবে নয়ন-পাতে ব্যাকুল বেদনাতে |
মূর্চ্ছামগ্ন মৌন রাতি প্রহর বেড়ে যায়
ঝিঁঝির ঝুমুর সঙ্গে কাঁদে সেতার মূর্চ্ছনায় |
. বাতাস যদি থামে,--
ভোরের রাতে হঠাৎ ছাতে বাদল যদি নামে ;
দুয়ার ফাঁকে হাওয়ার হাঁকে প্রদীপ যদি নিবে !
ভক্ত তোমার বাহির দ্বারে, আগলটি কি দিবে !
দীপ নিবে যায়, কি ক্ষতি তায়-কি ফল বলো লাজে,
মল্লারেতে মীড় মিলিয়ে সেতার যে তার বাজে !
মেঘের পর্দ্দা ঘনায় যদি অন্ধ রাতের পরে,
কি প্রয়োজন, দুয়ার দেওয়া রইল কিনা ঘরে !
অশ্রু নামে বর্ষাসম - হায় গো রাণী হায়,
মুর্ত্তীমতী সিদ্ধি কি তার ফলবে সাধনায় |
. ঐরে এল আলো--
রক্ত ঊষা পরল ভূষা সাদার সাথে কালো |
বায়ুর কন্ঠে নাই গরজন, ভজন গাহে পাখী,
পূর্ব্বাচলের তোরণ দ্বারে অরুণ মেলে আঁখি ;
উদাস তব নয়ন-তারার পান্ডু করুণ ছবি-
এই বেলা তার সুর মিলিয়ে বাজারে ভৈরবী |
সাধক, তুমি সিদ্ধ আজি--পূর্ণ মনোরথ,
ওই সুরে তোর যায় রে দেখা নূতন সুরের পথ |
যে যা বলে বলুক লোকে ভক্ত তোরই জয়,
বাণীর সাথে বীণার আজি নিবিড় পরিচয়!
স্বপ্ন দেশ
আজ ফাল্গুনী চাঁদের জ্যোছনা-জুয়ারে ভুবন ভাসিয়া যায়,
ওরে স্বপন-দেশের পরী-বিহঙ্গী, পাখা মেলে উড়ে' যায়'!
এই শ্যামল কোমল ঘাসে এই বিকচ পুন্দরাশে
এই বন-মল্লিকাবাসে, এই ফুরফুরে মলয়ায়--
তোর তারালোক হ'তে কিরণ-সুতায় ধীরে ধীরে নেমে আয়ে |
দেখ্ ঘাসের ডাঁটায় ফড়িং ঘুমায় সবুজ-স্বপন-সুখে,
দেখ্ পদ্মকোরকে অচেতন অলি শেষ মধুকণা মুখে!
হেথা ঝিঁঝির ঝি ঝিট তান, দেখ নিশি শেষে অবসান,
ছোট টুনটুনিদের গান এবে বিরত ক্লান্ত বুকে ;--
দেখ্ মোহ-মুর্ছিত মুখর ধরণী, সব ধ্বনি গেছে চুকে' ||
তোরে শিরীষ-ফুলের পাপড়ি খসায়ে পরাগ করিব দান,
তোরে রজনীগন্ধা গেলাস ভরিয়া অমিয়া করাব পান ;
শেষে ঘুম যদি তোর পায় হোথা ঘুমাবি হিন্দোলায়,
মোরা মৃদু দোল দিব তায়, গাহি' মৃদু-গুঞ্জন গান,--
চারু ঊর্ণনাভের ঝিকিমিকি জালে কেশরের উপাধান |
শেষে জোনাকির আলো নিভাবে যখন ঊষার কুয়াশাসারে,
মোরা স্বপন-শয়ন ভাঙি' দিব তোর পাপিয়ার ঝংকারে!
যদি ফিরে' যেতে মন চায়, যাস্ ঝিরি ঝিরি ঊষা-বায়,
চড়ি' প্রজাপতির পাখায়-- হিম সিক্ত শিশিরধারে ;
সাথে নিয়ে যাস্ এই রজনীর স্মৃতি ধরণীর পরপারে ||
Like